শিশুর জিহবার জন্মগত সমস্যা

শিশুর জিহবার জন্মগত সমস্যা

শিশুর জিহ্বার জন্মগত সমস্যা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেগুলো সাধারণত গর্ভাবস্থায় বিকাশের সময় ঘটে। এগুলো জিহ্বার গঠন, আকার বা কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে। কিছু সাধারণ জন্মগত জিহ্বার সমস্যা নিচে দেওয়া হলো:


১. জিহ্বা বাঁধা (Tongue-Tie বা Ankyloglossia)

  • বর্ণনা:
    জিহ্বার নিচের ফ্রেনুলাম (তন্তুময় টিস্যু) অতিরিক্ত শক্ত বা ছোট হওয়ায় জিহ্বা স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করতে পারে না।
  • লক্ষণ:
  • বুকের দুধ টানতে সমস্যা (শিশু ঠিকমতো চুষতে পারে না)।
  • বড় হলে কথা বলতে বা জিহ্বা বাইরে বের করতে অসুবিধা।
  • চিকিৎসা:
  • ফ্রেনোটমি: একটি ছোট সার্জারি করে ফ্রেনুলাম কাটা হয় (সাধারণত লেজার বা ডায়াথারমি দিয়ে)।
  • ব্যায়াম থেরাপি (জিহ্বার নড়াচড়া বাড়ানোর জন্য)।

২. ম্যাক্রোগ্লোসিয়া (বড় জিহ্বা, Macroglossia)

  • বর্ণনা:
    জিহ্বা স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হয়, যা মুখের গঠন বা শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • কারণ:
  • জেনেটিক ডিসঅর্ডার (যেমন: ডাউন সিনড্রোম, বেকউইথ-ভাইডেম্যান সিনড্রোম)।
  • জন্মগত অস্বাভাবিকতা।
  • লক্ষণ:
  • মুখ সব সময় খোলা থাকা, লালা পড়া।
  • খাওয়া বা নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট।
  • চিকিৎসা:
  • গুরুতর ক্ষেত্রে জিহ্বা ছোট করার অপারেশন (গ্লোসেক্টমি)।
  • স্পিচ থেরাপি বা অরথোডন্টিক চিকিৎসা (দাঁতের গঠন ঠিক করতে)।

৩. মাইক্রোগ্লোসিয়া (ছোট জিহ্বা, Microglossia)

  • বর্ণনা:
    জিহ্বা অস্বাভাবিকভাবে ছোট বা অনুন্নত হয়।
  • সমস্যা:
  • খাবার গিলতে বা কথা বলতে অসুবিধা।
  • চোয়ালের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
  • চিকিৎসা:
  • স্পিচ থেরাপি ও ফিজিক্যাল থেরাপি।
  • কিছু ক্ষেত্রে রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি।

৪. জিহ্বার বিভাজন (Bifid Tongue বা Forked Tongue)

  • বর্ণনা:
    জিহ্বার আগা দুটি ভাগে বিভক্ত (সাপের জিহ্বার মতো)।
  • কারণ:
  • জেনেটিক মিউটেশন বা নির্দিষ্ট সিনড্রোম (যেমন: অরোফেসিয়াল ডিজিজ)।
  • চিকিৎসা:
  • সাধারণত সমস্যা না করলে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।
  • কথা বলতে বা খেতে সমস্যা হলে প্লাস্টিক সার্জারি করা যেতে পারে।

৫. জিহ্বার গঠনগত বিকৃতি (Hypoglossia/Ag lossia)

  • বর্ণনা:
    জিহ্বা আংশিক বা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।
  • সমস্যা:
  • শ্বাসনালী বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি, খাওয়ায় অসুবিধা।
  • চিকিৎসা:
  • বিশেষায়িত নিওনেটাল কেয়ার ও সার্জারি।

কখন ডাক্তার দেখাবেন?

  • শিশু বুকের দুধ টানতে না পারলে বা ওজন না বাড়লে।
  • জিহ্বা নীল বা সাদা হয়ে গেলে (অক্সিজেনের অভাব)।
  • শ্বাস নিতে কষ্ট বা মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া।
  • জিহ্বা অতিরিক্ত বড়/ছোট বা বিভক্ত দেখালে।

প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা

  • জন্মপূর্ব যত্ন: গর্ভাবস্থায় ফোলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট নেওয়া।
  • শিশুর মুখ পরীক্ষা: জন্মের পর জিহ্বা, তালু ইত্যাদি পরীক্ষা করা।

জন্মগত জিহ্বার সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করলে চিকিৎসা সহজ হয়, তাই সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ।

ডাঃ এস, এম, নাজমুল ইসলাম
এমবিবিএস, এমএস( শিশু সার্জারী)
মেম্বার হাইপোসপেডিয়াস ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি
পেডিয়েট্রিক ইউরোলজি ট্রেনিং(ইন্ডিয়া)
ইউরোলজি ট্রেনিং (BSMMU)
শিশু সার্জারী ও শিশু ইউরোলোজি বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউট।
Hotline: 01777331511

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *