শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ইউরোলজিক্যাল সমস্যা দেখা যেতে পারে, যা জন্মগত বা পরবর্তীকালে যেকোনো সময়েও হতে পারে। এই সমস্যাগুলো শিশুদের মূত্রতন্ত্র এবং প্রজননতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। সময়মতো সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা হলে অনেক জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
শিশুদের প্রধান কিছু ইউরোলজিক্যাল সমস্যা
শিশুদের ইউরোলজিক্যাল সমস্যাগুলোর মধ্যে কিছু সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিচে দেওয়া হলো।
১. হাইড্রোনেফ্রোসিস (Hydronephrosis)
এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে কিডনিতে মূত্র জমা হওয়ার কারণে কিডনি ফুলে যায়। এর কারণ হতে পারে মূত্রনালীর কোনো ব্লক বা প্রস্রাবের উল্টো প্রবাহ (Vesicoureteral Reflux)। এটি জন্মগতও হতে পারে এবং প্রায়শই গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে এটি শনাক্ত করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, তবে গুরুতর ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার লাগতে পারে।
২. ভেসিকোউরেটেরাল রিফ্লাক্স (Vesicoureteral Reflux – VUR)
এই অবস্থায় মূত্রথলি থেকে প্রস্রাব উল্টো পথে কিডনিতে ফিরে যায়। এর ফলে কিডনিতে সংক্রমণ এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। এটি প্রায়শই মূত্রনালীর সংক্রমণের কারণ হয়। এর তীব্রতা অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা হয়।
৩. ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (Urinary Tract Infection – UTI)
শিশুদের মধ্যে মূত্রনালীর সংক্রমণ বেশ সাধারণ। মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়। এর উপসর্গগুলো হলো জ্বর, পেটে ব্যথা, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া। সময়মতো অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এর চিকিৎসা করা জরুরি, কারণ সংক্রমণ কিডনিতে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষতি হতে পারে।
৪. আনডিসেন্ডেড টেস্টিস (Undescended Testes – Cryptorchidism)
এই অবস্থায় শিশুর অণ্ডকোষ জন্মের আগে অণ্ডথলিতে নেমে আসে না। এটি সাধারণত জন্মের প্রথম বছরের মধ্যে নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। তবে, যদি তা না হয়, তবে এক বছর বয়সের মধ্যে অস্ত্রোপচার (Orchiopexy) করা প্রয়োজন, কারণ এটি ভবিষ্যতে প্রজনন ক্ষমতা এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৫. হাইপোসপাডিয়াস (Hypospadias)
এটি একটি জন্মগত ত্রুটি যেখানে ছেলেদের মূত্রনালীর মুখ লিঙ্গের ডগায় না থেকে নিচের দিকে থাকে। এর কারণে প্রস্রাব করতে অসুবিধা হয়। এটি সাধারণত এক থেকে দুই বছর বয়সের মধ্যে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ঠিক করা হয়।
৬. ফাইমোসিস এবং প্যারাফাইমোসিস (Phimosis and Paraphimosis)
- ফাইমোসিস: এই অবস্থায় লিঙ্গের মাথার দিকের চামড়াটি সম্পূর্ণভাবে পেছনে সরানো যায় না। এটি ছোট শিশুদের মধ্যে সাধারণ এবং সাধারণত চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে যদি প্রস্রাব করতে অসুবিধা হয় বা সংক্রমণ দেখা দেয়, তবে এর চিকিৎসার জন্য ক্রিম বা অস্ত্রোপচার (circumcision) করা হয়।
- প্যারাফাইমোসিস: এটি একটি জরুরি অবস্থা যেখানে চামড়াটি পেছনে সরানোর পর আর সামনে আনা যায় না, ফলে লিঙ্গের মাথায় রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
🔰 কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
শিশুর মধ্যে যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়, তাহলে দেরি না করে একজন শিশু সার্জারি বিশেষজ্ঞ বা শিশু ইউরোলজিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত:
- ঘন ঘন জ্বর, যার কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
- প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া।
- পেটে বা পিঠে ব্যথা।
- অস্বাভাবিক রঙের বা দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব।
- প্রসাবে রক্ত দেখা যাওয়া।
- অণ্ডথলিতে কোনো অস্বাভাবিকতা বা ফোলা দেখা যাওয়া।
শিশুদের ইউরোলজিক্যাল সমস্যাগুলো দ্রুত শনাক্ত করা এবং চিকিৎসা করানো গেলে অনেক দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
ডাঃ এস, এম, নাজমুল ইসলাম
এমবিবিএস, এমএস( শিশু সার্জারী)
মেম্বার হাইপোসপেডিয়াস ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি
পেডিয়েট্রিক ইউরোলজি ট্রেনিং(ইন্ডিয়া)
ইউরোলজি ট্রেনিং (BSMMU)
শিশু সার্জারী ও শিশু ইউরোলোজি বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউট।
Hotline: 01777331511
www.drnazmulislam.com
চেম্বারঃ
অ্যালায়েন্স হসপিটাল লিমিটেড
২৪/৩ খিলজী রোড (রিং রোড)
শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭
রুগি দেখার সময়ঃ বিকাল ৫:০০ – সন্ধ্যা ৭: ০০টা।
(শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন)